হুট করে ফেসবুক লাইভে চলে এলো চৈতী। পুরো নাম চৈতী মরিয়ম। তার স্বামী আর সে মিলে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করে নাম ‘তোমার আমার রান্না ঘর’ ।
চাকরির পাশাপাশি ফেসবুক থেকে বাড়তি ইনকামের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই হাসবেন্ড ওয়াইফ দুজনেই তাদের রান্না বিষয়ক সমস্ত কিছুর ভিডিও এই পেজে শেয়ার করে সাথে গল্প আড্ডা তো থাকেই।
তো দেখতে দেখতে তাদের পেজটা বেশ ভালো রিচ হয়। লাইক, মন্তব্য, আর ফলোয়ার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অবশেষে তারা মনিটাইজেশন পেয়ে যায় এবং ফাইনালি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা শুরু করে।
অর্থ আর খ্যাতিরর সাথে যোগ হয় পূর্ব শত্রুতাও। শান্তির জীবনে আবার অশান্তির আগুন যেন ধেয়ে আসে। অতীত যেন বর্তমান হয়ে ফিরে আসে। সুখ যেন দুঃখের সাগরে পর্যবেশিত হয়।
হায়, এখন কি করবে চৈতী ! কি করতে পারে সে ?
জমিলা খালা আবার পিছু নিয়েছে চৈতীর। এই জমিলা খালা চৈতীর আসল খালা নয়। সে সবার কাছে জমিলা খালা নামেই পরিচিত। যেন তার জন্মই হয়েছে হাজার হাজার মানুষের খালা হওয়ার জন্য আর টাকার বিনিময়ে মানুষের কপাল নষ্ট করার জন্য।
এই জমিলা হারানো মুখ অধ্যায়টা চৈতী জীবনে কেন শেষ হলো না, আবার কেন শুরু হতে যাচ্ছে সেই ভয়ংকর নাগিনী, সাপিনীর বিষময় অধ্যায় সেটাই ভেবে পেলনা চৈতী।
মায়ের সাথে জোগ সাজেশ করে এবং মাকে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে হাত করে এক বৃদ্ধ শয়তান বুড়োর সাথে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল চৈতীর এই জমিলা খালা।
সেই বুড়োর অর্থবিত্ত আর সম্পদের লোভে পড়ে যায় মা। তাই যুবতী মেয়েকে তুলে দিতে চায় সেই লোকের হাতে এর বিনিময়ে সেও পাবে কিছু সোনার অলংকার এমনকি নগদ টাকাও। যেহেতু চৈতীর বাবা নেই তাই মাই সংসারের হর্তা কর্তা। তাইতো ঘটক কাম দালাল জমিলা খালা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয় চৈতীর জীবনে।
চৈতীকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে জোর খাটিয়ে তাকে বন্দী করে এক প্রকার বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছিল চৈতীর মা আর এই জমিটা খালা।
তার সাথে এমন একটা কিছু ঘটতে পারে এটা আগেই অনুমান করতে পেরেছিল চৈতী। তাই সে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নিয়ে রেখেছিল।
চৈতী তখন সৈকতের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। দুচোখ ভরে প্রণয়ের স্বপ্ন। ভালোবাসার মানুষ সৈকতকে সে বলে রেখেছিল সব কথা। তার সাথে কি কি ঘটতে পারে। কোন এক রাতে ভয়াল ঝড় যদি তার জীবনে আসে সে কি পরম নির্ভরতায় সৈকতের হাত ধরে বাকি জীবন কাটাতে পারবে।
সৈকত চৈতীর কথা শুনে বলেছে, কেন পারবেনা। ভালোবাসা মানেইতো দুটো মানুষের কাছে আশা, একজন আরেকজনকে বুঝা। বিপতে পাশা থাকা। তুমি কোন চিন্তা করোন। আমি আছি তোমার সাথে, তোমার পাশে।
চৈতী যেমনটা অনুমান করেছিল, ঘটনা ঘটেছিল তাই। চৈতী নিজের রুমের লাগোয়া বারান্দায় আগে থেকে লুকিয়ে রাখা রশি গ্রিলে বেধে বিড়ালের মত নিঃশব্দে পালিয়ে গিয়েছিল। বারান্দায় গ্রিলে দরজা ছিল যা সব সময় তালা থাকতো। চৈতী বুদ্ধি করে একটা ডুপলিকেট চাপি তার কাছে রেখেছিল।
চৈতির উপর কি অত্যাচার চলেছে সে চোখ বুজলে এখনও সে দৃশ্য দেকতে পায়। খাওয়া বন্ধ মোবাইল বন্ধ, কারো সাথে কথা বলা বন্ধ, মানুষের দেখা করা বন্ধ। বিয়েতে রাজি না হলে এমন কি মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
সেই রাত যেন অভিশপ্ত রাত হয়ে এসেছিল চৈতীর জন্য। পালিয়ে গিয়ে সে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু একটি বিপদ থেকে বেঁচে গিয়ে যেন আরেকটি বিপদে পড়েছি সে।যেন নদী থেকে বিলে গিয়ে পড়ল। শহুরে কিছু গুন্ডা মার্কা পোলাপান রাতের আঁধারে একলা চৈতীকে পেয়ে তাকে পাশবিক নির্যাতন করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
কিন্তু ভাগ্য ভাল সৈকত তার বন্ধু নাসিরকে নিয়ে আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে ছিল চৈতীর অপেক্ষায়।
তারা অদূরে মানুষের ধ্বস্তাধস্তি ও একটি নারী কন্ঠের চিৎকার শুনতে পায়। সৈকতের শির দাঁড়া বেয়ে শীতল একটি স্রোত নেমে যায়।
প্রেমিকের প্রেমিক মন আর পঞ্চম ইন্দ্রিয় টের পেয়ে যায় প্রেমিকা তার বিপদে পড়েছে। তাইতো দেরি না করে তারা দুটি হুন্ডা নিয়ে দুপাশ থেকে ছুটে যায়। মানুষের আনাগোনা টের পেয়ে গুন্ডা ছেলেগুলো চৈতীকে রেখে পালিয়ে যায়।
চৈতী কান্না করতে করতে সেই যে সৈকতের বুকে ওম খুঁজে নিয়েছে আজও তা ফুরায়নি। হয়তো এ জীবনে তা ফুরাবেনা। পুরুষের বুকেই নারী তার বিপদে আস্থা খুজে পায়।
তারপর থেকে সেই রাত বেরিয়ে বিয়ে করে নতুন করে সংসার শুরু করে ওরা দুজন। ভালোই চলছিল সবকিছু। সংসার, সন্তান, চাকরি কিন্তু আবার যেন সেই দুঃস্বপ্ন এসে হানা দিল ফেসবুকে কাজ করার কল্যানে।
চৈতীর মা ও তার পরিবার জানতো না চৈতী কোথায় আছে কেমন আছে কিংবা মরে গেছে নাকি বেঁচে আছে।
এখন জমিলা খালা আর চৈতির মা আবারো তাকে ভয় দেখাতে শুরু করে। বিভিন্ন আইডি থেকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠায়।
তাই সহ্য করতে না পেরে অসহ্য হয়ে চৈতি হুট করেই ফেসবুক লাইভে এসে বলতে থাকে- জমিলা তুই ১৭৫৭ সালের নবাবের পরাজয়ের অন্যতম খুটি কলঙ্কিনী ঘষেটি বেগম । তুই হারামি তুই বজ্জাত। তুই একটা হারামী। তুই নারী জাতির কলঙ্ক। তুই নারী হয়ে আরেকটা নারীর সর্বনাশ করার জন্য আবারো আমার পিছু নিয়েছিস।
তুই শুনে রাখ। তুই যদি আবারো আমার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তবে আমি বাঘিনীর মতো তোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলব তোকে। এক ফোটা মায়া দেখাব না।
চৈতী আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক সে সময় চৈতির স্বামী সৈকত ও কন্যা জয়ী এসে ফেসবুক লাইভ থেকে সরে আসার জন্য চৈতীকে বলতে থাকে। শেষ মেষ তার লাইভটা আর কন্টিনিউ করতে দেয়না।
চৈতী রেগে গিয়ে বলে, না আমি সারা দেশকে জানাতে চাই। মানুষকে জানতে চাই। ওরা আমার জীবন নরকে পরিণত করেছে। আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিল পারেনি বলে কখনো আমার পিছু ছাড়েনি।
সেই ভয়ার রাতে ওরা আমাকে খুন করে ফেলতো যদি আমি পালাতে না পারতাম। আজও আমি ঘুমের ঘোরে সেই দুঃস্বপ্ন দেখি । আজও আমি ভয়ে আতকে উঠি। আজও আমি ভেবে পাইনা মা নামক আপন আশ্রয়টা কিভাবে পরগাছা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পর হয়ে যায়।
আমাকে বলতে দাও, আমার কথা দেশের মানুষকে শুনতে দাও। আমি আর পারিনা এই ভারী পাথর বহন করতে....................। কথা বলতে বলতে ফ্লোরে বসে পরে চৈতী । তার দুচোখ যেন শ্রাবণের নদী।
হুট করেই লাইভটা বন্ধ হয়ে যায়। যারা লাইভ দেখছিলেন তাদের কপালে একটু ভাজ পড়ে। সেই ভাজ পড়া কপালের জিজ্ঞাসা- আগা মাথা জানার আগে লাইভটা কেন বন্ধ হলো ?
মন্তব্যের ঘরে হাজারো মানুষের জিজ্ঞাসা কি হয়েছে আপু ? কিন্তু চৈতীর আর উত্তর দেওয়া হয়না। সে আর সেই ভয়াল রাত্রির কথা মনে করাতে চায়না। সে কেবল তার স্বামী, সন্তানের জন্য বাঁচতে চায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
চৈতী মরিয়ম নামের এক নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াল ঘটনা যখন ফেসবুক লাইবে বর্ণনা করছিলেন তখন হুট করেই তার লাইভটা বন্ধ হয়ে যায় সেই ঘটনাই গল্পের মূল বিষয়।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।